Pages

Tuesday, June 24, 2025

সাম্রাজ্যবাদ—এক বিকৃত মঞ্চ


  সাম্রাজ্যবাদ—এক বিকৃত মঞ্চ 

✍️ ইউসুফ আলী


 

তারা আসে হাসিমুখে, পিঠ চাপড়ে,

নিয়ে যায় মাটি—রক্তে রাঙিয়ে ফেলে নদী।

বলে, “তোমার ভালোর জন্য”,

আর রেখে যায় চুক্তির জঞ্জাল, বোমার স্তবক।


তারা বানায় 'শান্তির প্যাকেজ',

ভেতরে লুকানো যুদ্ধের মানচিত্র।

এক হাতে ডলার, আরেক হাতে ড্রোন—

এই দ্বৈত নীতির জালে গুটিয়ে যায় প্রাণ।


শিশুদের কাঁধে বই নয়, শোকের ছায়া;

মায়েরা কাঁদে বস্তিতে, আর ক্যামেরা খোঁজে গল্প।

অর্থনীতি আজ ‘ঋণের শিকার’,

স্বাধীনতা যেন ভাড়া খাটা শ্রমিক।


জিজ্ঞেস করি —

আর কতদিন এই মুখোশ পরা রাজনীতি?

আর কতদিন খালি পেটে গ্লোবাল চুক্তি?


কে দেবে জবাব, কে গড়বে প্রতিরোধ?

নাকি সবাই চুপচাপ, ইতিহাসের বোবা দর্শক?


আমরা যদি এখন না জাগি,

এই দুনিয়া হয়ে উঠবে শুধুই মানচিত্রের খেলা।

যেখানে প্রাণ গোনার আগে গোনা হবে পেট্রোল,

মৃত্যুর বাজারে বিকোবে স্বাধীনতার স্বপ্ন।


তাই, বলি—

থেমো না হৃদয়, জ্বলে উঠো প্রশ্নে,

সাম্রাজ্যবাদ ভাঙে সেই গর্জনে, যে শব্দ পায় মানুষের গলায়!

উম্মাহর জাগরণ শুরু কোথা থেকে?

 

"উম্মাহর জাগরণ শুরু কোথা থেকে?"

-ইউসুফ আলী 


শুরুটা কই থেকে হবে—

শক্তি দিয়ে?

স্লোগানে?

নাকি বুলেটের জবাবে বুলেটে?


না,

জাগরণ শুরু হবে—

হৃদয়ের ভিতর থেকে।


যেখানে চোখের পানি থাকবে গাজা-কাশ্মীরের জন্য,

কিন্তু সেই চোখ থাকবে নিজেকে দেখার মতো পরিষ্কার।


যেখানে আল্লাহর নামে নয়—

আল্লাহর জন্য হবে প্রতিবাদ।

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের চেয়ে

আত্মশুদ্ধির অঙ্গীকার হবে জোরালো।


জাগরণ শুরু হবে—

যখন এক মুসলিম,

অন্য মুসলিমকে শুধরে দিবে ভালোবাসায়।

যখন ঈমান হবে দল না হয়ে দীপ্তি।


জাগরণ আসবে—

যখন রাতের শেষ প্রহরে

একটি বুক ফেটে উঠবে উম্মাহর জন্য।

যখন ব্যবসার মুনাফার চেয়ে

ফিলিস্তিনের আহাজারি হবে বেশি বাস্তব।


জাগরণ আসবে—

যখন আমরা নিজেদের প্রশ্ন করবো,

“তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি ঠিক আছে…

তবে তারা যখন কাঁদছিল,

আমরা কি হাসছিলাম?”

মিডিয়ার দাস উম্মাহ

 

"মিডিয়ার দাস উম্মাহ"

- ইউসুফ আলী

তারা দেখে—

যা দেখানো হয়।

তারা বোঝে না সত্য,

শুধু চেনা ফ্রেমে আটকে থাকা মুখের ভাষ্য।


উম্মাহ আজ চোখের মালিক,

কিন্তু দৃষ্টির না।

স্ক্রিনে যা জ্বলে,

তাতেই হৃদয় কাঁপে বা উৎসবে নাচে।


ফিলিস্তিনের শিশুর মাথা উড়ে যায়,

সে খবর চাপা পড়ে

এক তারকার বিয়ের গহনার দামে।


একটি মসজিদে আগুন,

আর একটি ফুটবল ক্লাবে রঙিন জয়—

বেছে নিতে তারা দ্বিধা করে না,

কারণ মিডিয়া বলে দিয়েছে—“আসল ব্যথা কোনটা।”


তারা ভুলে যায়,

যে উম্মাহ কুরআন নিয়ে জেগেছিল,

আজ সে উম্মাহ টিভি রিমোটে ঘুমায়।


চোখ বুঁজে তারা “নিউজ চ্যানেল” দেখে,

আর কান বন্ধ করে দেয়

আলেমের সতর্কতা, ইতিহাসের হাঁক।


তারা সোচ্চার—

যখন মিডিয়া অনুমতি দেয়।

তারা নীরব—

যখন মিডিয়া নির্দেশ দেয়।


উম্মাহ যদি সত্য জানতে চায়,

তবে আগে তাকে জানতে হবে—

কে তার চোখের মালিক,

কে তার চিন্তার দাসত্ব চালায়।

উম্মাহর হারানো শান



 "উম্মাহর হারানো শান"

-ইউসুফ আলী


একসময়—

পৃথিবী দুলত ইসলামি পায়ে,

নদীর ধারে বসে জ্যোতির্বিজ্ঞান হতো,

আর মিম্বার হতো জ্ঞানের মিনার।


উম্মাহ ছিল না কেবল নামাজি—

ছিল নেতৃত্বের আলো,

ছিল ন্যায়ের তলোয়ার,

ছিল নীচু মাথার ওপরে আশার ছায়া।


গ্রন্থ ছিল কুরআন,

কিন্তু জীবন ছিল বাস্তব ধারায় রচিত ব্যাখ্যা।


আজ সে সব ইতিহাস—

কেবল স্কুলের পাঠ্য,

পড়ানো হয়,

তবে বিশ্বাস করা হয় না।


উম্মাহ আজ পরাজিত নয় অস্ত্রের জোরে,

বরং আত্মবিশ্বাসের অভাবে।

আমরা হারিয়েছি “লা ইলাহা”র শক্তি,

ধর্মকে সাজিয়েছি, চালিয়েছি—

কিন্তু অন্তর থেকে বাদ দিয়েছি বীরত্ব।


কোথায় সেই শান,

যে আল-কুরআন হাতে নিয়ে

পৃথিবীর অন্ধকারকে বলত—

“এবার আলো আসবে আমাদের দিক থেকে”?


আজ উম্মাহ দাঁড়ায় ভিক্ষার থালায়,

যেখানে একদিন তারা দিতো ইনসাফের পানপাত্র।

ঘুমন্ত বিবেক



 "ঘুমন্ত বিবেক"

 -ইউসুফ আলী

ঘুমিয়ে আছে,

তবু রোজ নামাজে দাঁড়ায়—

বিবেক।

যা না কাঁদে গাজায় শিশুর রক্তে,

না কাঁপে যখন মসজিদে আগুন ধরে।


তাকওয়ার কথা মুখে,

কিন্তু হৃদয় কেবলি বোঝে—

পণ্যের দাম, জমির রেজিস্ট্রি,

আর ডলার উঠানামার হিসেব।


উম্মতের রক্তে যখন ইতিহাস রচিত হচ্ছিল—

তখন ঘুমন্ত বিবেক টিকটক স্ক্রলে ব্যস্ত,

বা কাবার ছায়ায় বসে "উমরাহ ব্লগ" বানাচ্ছিল।


আল্লাহর নামে ব্যবসা,

ইসলামের নামে নীরবতা,

আর যখন প্রশ্ন ওঠে—

“আমরা কিছু করতে পারি না…”


সেই মুহূর্তে প্রশ্ন জেগে ওঠে:

তুমি কিছু করতে না পারো,

কিন্তু কিছু 'বুঝতেও' পারো না কেন?

কাঁদতেও পারো না কেন?

সেইটুকু অন্তত—ইমানের দাবিতে?”


ঘুমন্ত বিবেক জেগে উঠবে কবে?

যখন শেষ গুলিটাও ফুরাবে?

না কি কিয়ামত এসে দরজায় কড়া নাড়বে?

চুপ থাকার দায়


 "চুপ থাকার দায়"

-ইউসুফ আলী 

 

যখন ঘর পুড়ে যায়,

তখন শুধু আগুন নয়—

চুপ থাকা দেয়ালগুলোও দোষী হয়।


যুগের পর যুগ

গাজা নামক ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে এক জাতি,

শুধু তারা নয়—

পৃথিবী তাকিয়ে আছে আরবের নিঃশব্দতা দেখে।


পেট্রোডলারে ভিজে থাকা বিবেক,

হুরের স্বপ্নে ডুবে থাকা নীতি,

তারা কি জানে—

মসজিদের মিনারে আর রক্তের গন্ধ জমে আছে?


এখন হঠাৎ কী হলো?

স্বার্থে আগুন লাগল?

নাকি পশ্চিমা রাজনীতির খেলা থেকে

একটু ছিটেফোঁটা সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা?


উম্মাহ জেগে ওঠে না স্লোগানে,

উম্মাহ জাগে—যখন হৃদয়ে ব্যথা সত্য হয়ে ওঠে।

নেতৃত্বহীন উম্মাহ





 "নেতৃত্বহীন উম্মাহ"

-ইউসুফ আলী

মুসলিম দুনিয়া আজ সমুদ্রের মতো—

প্রশস্ত,

তবে দিকহীন।

জাহাজ আছে, মাঝি নেই।

দু’হাত উঁচিয়ে দোয়া,

তবু পেছনেই মাটিতে পড়ে থাকে রক্তাক্ত কোনো গাজা।


কোথায় সেই খলিফা,

যার ডাক এক ছিল শাসনের ও স্নেহের?

কোথায় সেই নেতৃত্ব—

যার উপস্থিতিতে উম্মাহ এক শরীর, এক হৃদয়?


আজ যে যার রাজসিংহাসনে বন্দি,

সীমান্ত নামক কাঁটাতারে আটকে আছে ঈমান।

কেউ হিজাব নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত,

কেউ তেল বিক্রির চুক্তিতে—


আর কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, রোহিঙ্গা?

ওরা যেন সংবাদপত্রের পুরনো শিরোনাম,

যাদের জন্য চোখের পানি নয়,

শুধু কূটনৈতিক বিবৃতি বরাদ্দ।


নেতৃত্ব নেই—

কারণ ঈমান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে চোখের দৃষ্টি।

আর নেতৃত্বহীন উম্মাহ

শুধু ভেঙে পড়ে,

ধ্বংস হয়—

অথবা চুপচাপ লাশ গোনে।

Tuesday, June 17, 2025

ফিলিস্তিনের আর্তনাদ

 


ফিলিস্তিনের আর্তনাদ 

-ইউসুফ আলী

একটি পা নেই ইয়াসমিনের, তবু সে হাঁটতে চায়,

ভাঙা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে সে আকাশে তাকায়।

জানালা নেই, দরজাও না,

তবু তার চোখে স্বপ্ন—“আমারও হবে ঘর একদিন!”


পৃথিবী নাকি শান্তির গান গায়,

তবু কেন তার উঠোনে শুধু বোমার শব্দ বাজে?

পড়ার বই রক্তে ভিজে গেছে,

সেখানে লেখা, “মানবতা সবার আগে!”


একটি শিশুর মুখে আর হাসি নেই,

সে জানে, ঘুম মানেই মৃত্যু আসতে পারে।

তার খেলার সাথী ছিল এক পুতুল,

আজ পুতুলও চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তূপের তলে।


কে বলবে, তারা মানুষ নয়?

কে দেবে জবাব এই ইতিহাসের কাছে?

ফিলিস্তিন আজ প্রশ্ন করে,

মানুষ কি শুধু নামেই মানুষ?